বিশ্ব জুড়ে আজ করোনার মত অদৃশ্য শত্রুর একছত্র আধিপত্য। সকল প্রযুক্তি-প্রচেষ্টা একপ্রকার অসহায়। তার মধ্যে কিছু মানুষ এই অদৃশ্য শত্রুর বিপক্ষে দায়িত্বের জায়গা থেকে বুকচেতিয়ে যুদ্ধ করে যাচ্ছে জীবন বাজি রেখে। তাদের আমরা ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা বলে অবহিত করছি। তাদের মধ্যে আছে ডাক্তার, নার্স-স্বাস্থ্য কর্মী। এর বাইরে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ আরো কিছু পেশার মানুষ। আমাদের দেশে এদের মধ্যে সকলেই মোটামুটি সরকারি চাকরিজীবী করোনাকালীন বিশেষ সুযোগ-সুবিধা, স্বাস্থ্য বীমার আওতাধীন।
তাদের বাইরে কিছু মানুষ আছে যারা করোনাকালীন কোন সুযোগ-সুবিধার আওতাধীন না। না ভাতা আছে, না বীমা তবে তারাই মানুষের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। তাদের মাধ্যমেই সরকারের অন্যান্য বিভাগের সাথে জনগনের সেতুবন্ধন ঘটে। তারা আর কেউ নন তারা স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি। যারা আমার-আপনার প্রতিনিধি স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার।
তারা করোনাকালীন খাদ্য সহায়তাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রণয়ন, বিতরণ করে যাচ্ছে। তাদের কাজেরও ঝুঁকি কম না। এর বাইরে তাদের আরেকটি প্রধান কাজের মধ্যে প্রত্যেকদিনই করতে হচ্ছে কোন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর রোগীর বাড়ি লকডাউনসহ, রোগীর ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক কাজসমূহ সম্পাদন করার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি। এতে অনেক ঝুঁকি এবং ঝক্কি-ঝামেলা আছে।
সবচেয়ে মজার বিষয় তাদের কোন স্বীকৃতি নাই, তারা জিরো লাইনে আছে আমাদের এবং রাষ্ট্রের চোখে। স্থানীয় সরকারের এই জনপ্রতিনিধিদের সংখ্যার নগন্য অংশের চাল চুরি আর অনিয়ম যেভাবে আমরা মিডিয়ায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরে তাদের ধুয়ে দিচ্ছি তাতে তাদের ভাল কাজগুলো তুলে আনতেও কেউ মনে হয় সাহস পায় না।
বাংলাদেশে মোট ৪৫৭১ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আছে, ৪১১৯৩ জন পুরুষ মেম্বার এবং ১৩৭১৩ জন মহিলা মেম্বার আছে; সর্বমোট ৫৯৪৭৭ জন জনপ্রতিনিধি। এবার আসি তাদের মধ্যে অনিয়মের জন্য বহিষ্কার বা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে ধরে নিলাম ১০০০ জন; যা মোট জনপ্রতিনিধির ২ শতাংশেরও কম। এই দুই শতাংশের অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য বাকী ৯৮শতাংশের ভাল কাজগুলোকে অস্বীকার বা তিরস্কার করার কোন সুযোগ নেই। তাদের শ্রম-ত্যাগ-সেবার জন্য আমরা কখনো তাদের সাধুবাদ বা ন্যুনতম ধন্যবাদটুকু জানাই না; বিশ্বে এরকম থ্যাংলেস জব আর আছে কি না আমার জানা নেই! করোনাকালে তাদের সাথে সহযোগী হিসেবে আছেন একজন করে ইউপি সচিব প্রত্যেক ইউনিয়নে তাদেরও একই দশা।
তারা সরকারি তেমন কোন সুযোগ-সুবিধা পায় না, কিন্তু তারা সরকারে অপরিহার্য অংশ। তাদের জন্য নেই কোন বিশেষ ভাতা বা বীমার আছে এক ধরনের বাঁকা চোখের ইশারা এবং অপবাদ।তাদের ভাতার কথা আজ না বলি, আপনার-আমার শুনলে লজ্জা লাগতে পারে। রাষ্ট্রের যেখানে চিন্তা নেই তাদের জন্য আমার আপনার কি দরকার আবার তাদের জন্য চিন্তা করার!
অ্যাডভোকেট তারিক আজিজ জামী
ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত।